পাখির অদ্ভুত আচরণ- পিছনে উড়তে পারা একমাত্র পাখি হামিংবার্ড
পাখির জগতটা একটা অদ্ভুত রহস্যের খনি। আমরা সাধারণত পাখিদের দেখি আকাশে উড়তে, গান গাইতে বা শিকার করতে। কিন্তু কিছু পাখি আছে যাদের আচরণ এতটাই অদ্ভুত যে, বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি। উদাহরণস্বরূপ, হামিংবার্ডের মতো পাখি যারা পিছন দিকে উড়তে পারে বা কিছু পাখি যারা অ্যান্টস (পিপড়া) দিয়ে নিজেদের শরীর ঢেকে রাখে প্যারাসাইটস দূর করার জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা এমন কিছু অদ্ভুত পাখির আচরণ নিয়ে আলোচনা করব, যা না শুধু কৌতূহল জাগায় বরং বিজ্ঞানীয় দিক থেকেও তথ্যবহুল। যদি আপনি "অদ্ভুত পাখি" বা "পিছনে উড়তে পারা পাখি" খুঁজছেন, তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য। আমরা বিজ্ঞানীয় ব্যাখ্যা, অ্যারোডায়নামিক্স এবং পাখির অ্যান্টিং আচরণের মতো টপিক কভার করব, যাতে আপনি পুরোপুরি অথেনটিক তথ্য পান।
হামিংবার্ডকে বলা হয় প্রকৃতির ছোট্ট হেলিকপ্টার। এরা শুধু পিছনে উড়ে না, হোভার করে, সাইডওয়েজ চলে এবং এমনকি আপসাইড ডাউনও উড়তে পারে। অন্য পাখিরা যেখানে উড়ানের জন্য ডাউনস্ট্রোক (নিচের দিকে ডানা ঝাপটানো) ব্যবহার করে লিফট জেনারেট করে, হামিংবার্ডরা আপস্ট্রোকেও (উপরের দিকে) লিফট তৈরি করে। এই অদ্ভুত ক্ষমতা তাদের অ্যানাটমির কারণে সম্ভব। চলুন বিস্তারিত জেনে নিই।
হামিংবার্ডের অদ্ভুত উড়ান: পিছনে উড়ার রহস্য
হামিংবার্ড (Trochilidae পরিবারের পাখি) দুনিয়ার একমাত্র পাখি যারা সত্যিকার অর্থে পিছন দিকে উড়তে পারে। এরা হোভার করে মধ্য আকাশে থেমে থাকতে পারে, যা অন্য কোনো পাখির পক্ষে অসম্ভব। বিজ্ঞানীরা বলেন, এই ক্ষমতা তাদের উইং স্ট্রাকচার এবং অ্যারোডায়নামিক্সের ফলে আসে। হামিংবার্ডের ডানা প্রায় পুরোপুরি এক্সটেন্ডেড অবস্থায় থাকে উড়ানের সময়, এবং তারা ফিগার-এইট প্যাটার্নে ডানা ঘুরায়। এতে করে এয়ার ফরওয়ার্ড, ব্যাকওয়ার্ড এবং ডাউনওয়ার্ড পুশ হয়, যা লিফট এবং থ্রাস্ট তৈরি করে। এই প্যাটার্ন হেলিকপ্টারের রোটরের মতো, যা তাদের মধ্য আকাশে স্থির রাখে।
অ্যানাটমিক্যালি বললে, হামিংবার্ডের হামারাস (উইং বোন) অন্য পাখির তুলনায় অনেক ছোট, যা তাদের ডানাকে ১৮০ ডিগ্রি রোটেট করতে সাহায্য করে। এতে করে আপস্ট্রোকে ডানা ইনভার্ট হয়ে লিফট জেনারেট করে। একটা হামিংবার্ডের ডানা প্রতি সেকেন্ডে ৫০-১০০ বার বিট করে, যা তাদের স্পিড ২০-৪৫ মাইল প্রতি ঘণ্টায় নিয়ে যায়। ডাইভ করার সময় এরা ৬০ মাইল পর্যন্ত স্পিডে যেতে পারে। এই অদ্ভুত উড়ান তাদের অ্যাগনিস্টিক ইন্টার্যাকশনে (অন্য হামিংবার্ডের সাথে লড়াই) সাহায্য করে, যেমন পিছনে উড়ে পালানো বা আক্রমণ করা।
বিজ্ঞানীয় দিক থেকে, হামিংবার্ডের অ্যারোডায়নামিক্স অন্যান্য ইনসেক্টস (যেমন মৌমাছি) এর সাথে তুলনীয়। ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে, এরা ডাউনস্ট্রোকে পজিটিভ লিফট এবং আপস্ট্রোকে ইনভার্টেড উইংস দিয়ে লিফট তৈরি করে। এই ক্ষমতা তাদের নেকটার খাওয়ার সময় হোভার করতে সাহায্য করে, যা তাদের হাই মেটাবলিজম (প্রতি দিন নিজের ওজনের দ্বিগুণ খাবার খায়) সাপোর্ট করে। দুনিয়ায় ৩০০+ প্রজাতির হামিংবার্ড আছে, মূলত আমেরিকায়, এবং এরা মাইগ্রেট করে হাজার মাইল পথ পাড়ি দেয়। কিন্তু ক্লাইমেট চেঞ্জের কারণে এদের হ্যাবিট্যাট কমছে, যা কনজারভেশনের জন্য চ্যালেঞ্জ।
আরো পড়ুন - King Snake vs. Corn Snake - কোনটা পালবেন?
পাখির অ্যান্টিং আচরণ: অ্যান্টস দিয়ে প্যারাসাইটস দূর করা
আরেকটা অদ্ভুত আচরণ হলো "অ্যান্টিং" (Anting), যেখানে পাখি ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যান্টস দিয়ে নিজেদের শরীর ঢেকে রাখে বা অ্যান্টসের উপর শুয়ে পড়ে। এটা প্রথম দেখলে মনে হয় পাখি পাগল হয়ে গেছে, কিন্তু এর পিছনে বিজ্ঞানীয় কারণ আছে। অ্যান্টস ফর্মিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য কেমিক্যালস সিক্রিট করে, যা প্যারাসাইটস যেমন মাইটস, লাইস এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করে। এই আচরণ ২০০+ প্রজাতির পাখিতে দেখা যায়, যেমন জেস, ক্রোস, রবিনস এবং গ্র্যাকলস।
অ্যান্টিং দু'ধরনের: অ্যাকটিভ (পাখি অ্যান্টস তুলে শরীরে ঘষে) এবং প্যাসিভ (অ্যান্টসের উপর শুয়ে পড়ে, যাতে অ্যান্টস কামড়ায়)। রয়্যাল সোসাইটির গবেষণায় দেখা গেছে, এটা অ্যান্টি-প্যারাসাইট বিহেভিয়রের অংশ। ফর্মিক অ্যাসিড প্যারাসাইটসকে কিল বা রিপেল করে, যা পাখির ফেদার মেইনটেন করে। কিছু হাইপোথিসিস বলে, এটা ফুড প্রিপারেশনের জন্যও হয়—অ্যান্টসের অ্যাসিড টক্সিন রিমুভ করে খাবারকে সেফ করে। আবার কিছু বলে এটা সেল্ফ-স্টিমুলেশন, যা পাখিকে আনন্দ দেয়।
একটা উদাহরণ: আমেরিকান রবিনস অ্যান্টহিলের উপর শুয়ে পড়ে, যাতে অ্যান্টস তাদের ফেদারে ঢোকে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, অ্যান্টিং প্যারাসাইটস কমায়, যা পাখির সারভাইভাল রেট বাড়ায়। কিন্তু এটা রিস্কি—যদি অ্যান্টস খুব অ্যাগ্রেসিভ হয়, পাখি আহত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেন, এটা ইভোল্যুশনারি অ্যাডাপটেশন, যা পাখিদের পরিবেশের সাথে অ্যাডজাস্ট করতে সাহায্য করে। পুরো রিসার্চ পেপারটি ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন।
অন্যান্য অদ্ভুত পাখি এবং তাদের আচরণ
হামিংবার্ড এবং অ্যান্টিং ছাড়াও দুনিয়ায় আরও অদ্ভুত পাখি আছে। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রিচ—সবচেয়ে বড় পাখি, যারা উড়তে পারে না কিন্তু ৭০ কিমি/ঘণ্টা স্পিডে দৌড়ায়। তাদের হাড় হোলো, যা উড়ানের জন্য অনুপযোগী। ফ্লেমিঙ্গোর গোলাপী রং ক্যারোটিনয়েড পিগমেন্ট থেকে আসে, যা তারা শ্রিম্প খেয়ে পায়। ফ্রগমাউথস অ্যান্টিং করে কিন্তু অ্যারোডায়নামিক্সে দুর্বল। ব্ল্যাক স্কিমারস জলের উপর স্কিম করে মাছ ধরে, তাদের চোখ স্পেশালাইজড। কোয়েকার প্যারটস হেড শেক করে, যা তাদের নাম দিয়েছে। হেরনস সানবাথিং পোজ নিয়ে প্যারাসাইটস দূর করে। এই আচরণগুলো ইভোল্যুশনের ফলে, যা পাখিদের সারভাইভালে সাহায্য করে।
পাখির অদ্ভুত আচরণ যেমন হামিংবার্ডের পিছনে উড়ান বা অ্যান্টিং আমাদের প্রকৃতির বৈচিত্র্য দেখায়। এগুলো না শুধু কৌতূহলী বরং বিজ্ঞানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যা অ্যারোডায়নামিক্স এবং অ্যান্টি-প্যারাসাইট স্ট্র্যাটেজি বোঝায়। কিন্তু ক্লাইমেট চেঞ্জ, হ্যাবিট্যাট লস এবং পলিউশনের কারণে এই পাখিরা থ্রেটেন্ড। আমাদের কনজারভেশন প্রোগ্রামে যোগ দিয়ে এদের রক্ষা করতে হবে। যদি আপনি "অদ্ভুত পাখি ফ্যাক্টস" বা "পাখির অদ্ভুত আচরণ" নিয়ে আরও জানতে চান, তাহলে কমেন্ট করুন।


0 Comments