বিড়াল সাথে নিয়ে ভ্রমন করবেন? জেনে নিন কিছু টিপস

বিড়ালরা তাদের রুটিন, ঘরের গন্ধ আর পরিচিত জায়গা পছন্দ করে। তাই অনেক cat parents ভাবেন, “বিড়ালকে নিয়ে বাইরে যাওয়া ঝামেলার!” কিন্তু সঠিক প্রস্তুতি নিলে বিড়ালের সাথে রোড ট্রিপ, প্লেন জার্নি এমনকি ছুটির দিনে অন্য শহরে যাওয়াও সম্ভব—এবং মজাদারও। আমি নিজে দুইটা বিড়াল (মিনু ও লিলি) নিয়ে একাধিকবার ভ্রমণ করেছি, তাই এই অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া প্র্যাকটিক্যাল টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

১. ভ্রমণের আগে প্রস্তুতি শুরু করুন

প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ভেটের সাথে কথা বলা। ভ্রমণের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে বিড়ালকে চেকআপ করান। ভ্যাকসিন আপডেট, ফ্লি-টিক ট্রিটমেন্ট এবং সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিন। অনেক এয়ারলাইন ও দেশের ইমিগ্রেশনের জন্য হেলথ সার্টিফিকেট লাগে।

যদি আপনার বিড়াল খুব স্ট্রেসপ্রোন হয়, তাহলে ভেট ফেরোমন স্প্রে (যেমন Feliway) বা কখনো কখনো হালকা সেডেটিভ দিতে পারেন। আমি নিজে Feliway স্প্রে ব্যবহার করি—ক্যারিয়ারের ভিতরে ১৫ মিনিট আগে স্প্রে করলে অনেক বিড়াল শান্ত হয়ে যায়।

২. সঠিক ক্যারিয়ার বেছে নিন

বিড়ালের ক্যারিয়ার হলো তাদের “মোবাইল বাড়ি”। হার্ড-সাইডেড ক্যারিয়ার কারে সবচেয়ে নিরাপদ, কারণ অ্যাক্সিডেন্ট হলে এটি বিড়ালকে প্রটেক্ট করে। প্লেনে যাওয়ার জন্য সফট-সাইডেড ক্যারিয়ার লাগবে যা এয়ারলাইনের সাইজ লিমিটের মধ্যে ফিট হয়।

আমার অভিজ্ঞতা বলে, ভ্রমণের কমপক্ষে দুই-তিন সপ্তাহ আগে থেকে ক্যারিয়ারে অভ্যস্ত করা খুব জরুরি। প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট ক্যারিয়ারের ভিতরে খেলনা, কম্বল আর ট্রিট রেখে দিন। বিড়াল যখন নিজে থেকে ঢুকতে শুরু করবে, তখন বুঝবেন কাজ হয়েছে।

  • রোড ট্রিপের জন্য: হার্ড প্লাস্টিকের ক্যারিয়ার (দুর্ঘটনায় সুরক্ষা বেশি)
  • প্লেনে ক্যাবিনে নেবেন: এয়ারলাইন অ্যাপ্রুভড সফট ক্যারিয়ার (সিটের নিচে ফিট হবে)
  • আমার প্রিয়: Sleepypod বা Petmate Two Door Top Load – উপর থেকে খোলা যায়, ভেতরে হাত ঢোকানো যায়।

৩. গাড়িতে যা করবেন, যা করবেন না

কারে যাওয়ার সময় ক্যারিয়ার সিটবেল্ট দিয়ে বেঁধে রাখুন। বিড়ালকে কখনোই লুজ ছাড়বেন না—একটা হঠাৎ ব্রেকে বা ঘুরতে গেলে তারা আহত হতে পারে। প্রতি ২-৩ ঘণ্টায় স্টপ করুন। গাড়ির দরজা খুলে লিটার বক্স বা অ্যাবজর্বেন্ট প্যাড রাখা পোর্টেবল লিটার বক্স বের করুন।

আমি একবার ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার সময় প্রতি স্টপে মিনুকে কোলে নিয়ে ৫ মিনিট হাঁটতে দিয়েছিলাম। এতে তার স্ট্রেস অনেক কমে গিয়েছিল। গাড়ির এয়ার কন্ডিশনিং চালু রাখুন, কিন্তু সরাসরি বিড়ালের দিকে বাতাস না পড়ে।

একটা ছোট লিটার বক্স, পানির বাটি সাথে রাখুন। আমি তো গাড়ির ডিকিতে একটা ছোট টয়লেট ব্যাগ রাখি – ভিতরে ডিসপোজেবল লিটার বক্স।

৪. প্লেনে যাওয়ার নিয়ম-কানুন

বেশিরভাগ এয়ারলাইন বিড়ালকে ক্যাবিনে নিতে দেয় যদি ক্যারিয়ার সিটের নিচে ফিট হয়। কার্গোতে পাঠানোর চেয়ে ক্যাবিনে নেওয়া অনেক ভালো। ফ্লাইটের আগে ৪-৬ ঘণ্টা খাওয়ানো বন্ধ করুন যাতে মোশন সিকনেস না হয়। ক্যারিয়ারের ভিতরে একটা অ্যাবজর্বেন্ট প্যাড রাখুন—কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হলেও পরিষ্কার করা সহজ।

  • বুকিংয়ের সময়ই জানিয়ে দিন “পেট ইন ক্যাবিন”। সংখ্যা খুব সীমিত।
  • ভ্রমণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভেট থেকে ফিট টু ফ্লাই সার্টিফিকেট লাগবে।
  • ফ্লাইটের ৪ ঘণ্টা আগে হালকা খাওয়ান, কিন্তু পানি দিন।
  • সিকিউরিটি চেকে ক্যারিয়ার থেকে বের করতে হয় – তাই হার্নেস পরিয়ে নিন বা গলায় হাত দিয়ে ধরে রাখুন।

৫. পানি, খাবার ও লিটারের ব্যবস্থা

ভ্রমণে ডিহাইড্রেশন হওয়ার ঝুঁকি বেশি। পোর্টেবল ওয়াটার বোতল বা ডিসপেনসার নিন। আমি একটা ছোট সিলিকন বোল ব্যবহার করি যা ফ্ল্যাট হয়ে ব্যাগে রাখা যায়। খাবারের ক্ষেত্রে ড্রাই ফুড বা ট্রিট বেশি নিন, কিন্তু জার্নির আগে হালকা খাওয়ান।

পোর্টেবল লিটার বক্স (যেমন ডিসপোজেবল বা ফোল্ডেবল) অবশ্যই সঙ্গে রাখুন। আমি একটা ছোট ব্যাগে লিটার, স্কুপ এবং প্লাস্টিক ব্যাগ রাখি।

৬. নতুন জায়গায় পৌঁছে কী করবেন

হোটেল বা নতুন বাড়িতে পৌঁছেই একটা ছোট রুমে ক্যারিয়ার খুলুন। লিটার বক্স, পানি, খাবার আর একটা পরিচিত কম্বল রেখে দিন। বিড়ালকে জোর করে বের করবেন না—নিজের গতিতে এক্সপ্লোর করতে দিন। প্রথম কয়েক ঘণ্টা তারা লুকিয়ে থাকতে পারে, এটা স্বাভাবিক।

৭. অতিরিক্ত টিপস

  • মাইক্রোচিপ এবং কলারে আইডি ট্যাগ রাখুন।
  • সবসময় একটা ছোট ফার্স্ট-এইড কিট রাখুন (ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক, মেডিসিন)।
  • বিড়ালের স্ট্রেসের লক্ষণ দেখলে (অতিরিক্ত মিও, লুকিয়ে থাকা, খাওয়া বন্ধ) শান্তভাবে কথা বলুন এবং ফেরোমন স্প্রে ব্যবহার করুন।

জরুরি কিটে যা রাখবেনই

  • Feliway স্প্রে
  • প্রিয় খাবার + ট্রিট
  • পোর্টেবল লিটার বক্স + লিটার
  • প্রাথমিক চিকিৎসা কিট (গজ, অ্যান্টিসেপটিক, টিক রিমুভার)
  • সাম্প্রতিক ছবি (হারিয়ে গেলে কাজে লাগে)
  • মাইক্রোচিপ আপডেট করা থাকলে আরও ভালো

হ্যাঁ, বিড়াল নিয়ে ঘোরা একটু বেশি পরিশ্রম। কিন্তু যখন সকালে দার্জিলিংয়ের জানালায় বসে মিঠু কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখছে, আর আমি তার পাশে কফি খাচ্ছি – তখন মনে হয়, এই পরিশ্রমের চেয়ে বড় কোনো সুখ নেই।

আপনার বিড়ালটাও তো আপনার ফ্যামিলি। তাকে বাড়িতে ফেলে যাওয়ার চেয়ে একটু কষ্ট করে সাথে নিয়ে যান। বিশ্বাস করুন, সে আপনাকে তার ভাষায় অনেক ধন্যবাদ দেবে।

আপনার বিড়াল নিয়ে কোথায় ঘুরতে চান প্রথমবার? কমেন্টে জানান, আমি পার্সোনাল টিপস দিয়ে দেব!

Post a Comment

0 Comments