Advertisement

বিড়ালের রঙের জেনেটিক্স: কেন অরেঞ্জ বিড়াল বেশিরভাগ পুরুষ এবং ক্যালিকো বিড়াল মেয়ে?

 অরেঞ্জ বিড়াল পুরুষ এবং ক্যালিকো বিড়াল মেয়ে হওয়ার কারন কি? 

হ্যালো বিড়ালপ্রেমীরা! আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, রাস্তাঘাটে বা বাড়িতে যে অরেঞ্জ (জিঞ্জার বা লালচে) বিড়াল দেখেন, তার অধিকাংশই ছেলে। আর ক্যালিকো (তিন রঙের – কালো, অরেঞ্জ আর সাদা) বা টরটয়শেল (কালো-অরেঞ্জ মিশ্রিত) বিড়াল প্রায় সবসময়ই মেয়ে। এটা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয়, বরং বিড়ালের জেনেটিক্সের একটা অসাধারণ রহস্য! আজকের এই পোস্টে আমরা বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে বুঝবো এর পেছনের কারণ – X ক্রোমোজোম, জিন মিউটেশন আর ২০২৫ সালের নতুন আবিষ্কার পর্যন্ত। চলুন শুরু করি!

বিড়ালের লিঙ্গ নির্ধারণ এবং X ক্রোমোজোমের ভূমিকা

প্রথমে বেসিকটা বুঝে নিই। মানুষের মতোই বিড়ালের লিঙ্গ নির্ধারিত হয় ক্রোমোজোম দিয়ে:

  • মেয়ে বিড়াল: XX (দুটো X ক্রোমোজোম)
  • ছেলে বিড়াল: XY (একটা X আর একটা Y ক্রোমোজোম)

বিড়ালের পশমের রঙ নির্ধারণকারী একটা গুরুত্বপূর্ণ জিন (যাকে বলা হয় "O" বা Orange locus) থাকে শুধুমাত্র X ক্রোমোজোমে। এই জিনের দুটো ভার্সন আছে:

  • O (ডমিন্যান্ট): অরেঞ্জ বা লালচে পিগমেন্ট (ফিওমেলানিন) তৈরি করে।
  • o (রিসেসিভ): নন-অরেঞ্জ, অর্থাৎ কালো/বাদামি পিগমেন্ট (ইউমেলানিন) তৈরি করে।

এখন দেখি কী হয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে:

ছেলে বিড়ালদের ক্ষেত্রে (XY):

ছেলেরা শুধু একটা X পায় (মায়ের থেকে)। তাই:

  • যদি O পায় → পুরো শরীর অরেঞ্জ বিড়াল (জিঞ্জার ট্যাবি)।
  • যদি o পায় → কালো/বাদামি/ধূসর ইত্যাদি।

একটা মাত্র X থাকায় কোনো মিশ্রণ হয় না। তাই অরেঞ্জ ছেলে বিড়ালের সংখ্যা অনেক বেশি – প্রায় ৮০% অরেঞ্জ বিড়ালই পুরুষ!

মেয়ে বিড়ালদের ক্ষেত্রে (XX):

মেয়েরা দুটো X পায় – একটা বাবার থেকে, একটা মায়ের থেকে। সম্ভাবনা:

  • OO → পুরো অরেঞ্জ (খুব রেয়ার, কারণ দুটো O পাওয়া কম সম্ভব)।
  • oo → পুরো নন-অরেঞ্জ (কালো/বাদামি)।
  • Oo (হেটেরোজাইগাস) → এখানেই ম্যাজিক! দুটো ভিন্ন অ্যালিল থাকায় শরীরে মোজাইক প্যাটার্ন তৈরি হয়।

X ক্রোমোজোম ইনঅ্যাকটিভেশন – ক্যালিকো/টরটয়শেলের রহস্য

মেয়ে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের (বিড়াল সহ) শরীরে দুটো X ক্রোমোজোম থাকলেও একটা সবসময় নিষ্ক্রিয় (ইনঅ্যাকটিভ) হয়ে যায়। এটাকে বলে র‍্যান্ডম X ক্রোমোজোম ইনঅ্যাকটিভেশন বা Lyonization (১৯৬১ সালে মেরি লায়ন আবিষ্কার করেন)।

ভ্রূণের প্রথম দিকে প্রত্যেক কোষে র‍্যান্ডমলি একটা X নিষ্ক্রিয় হয়ে Barr Body তৈরি করে। তারপর সেই কোষের সব বংশধর একই X নিষ্ক্রিয় রাখে। ফলে:

  • যে কোষে O অ্যাকটিভ → সেখানে অরেঞ্জ পশম।
  • যে কোষে o অ্যাকটিভ → সেখানে কালো/বাদামি পশম।

এভাবে শরীরে প্যাচ প্যাচ রঙ তৈরি হয় – এটাই টরটয়শেল (কালো+অরেঞ্জ) বা ক্যালিকো (কালো+অরেঞ্জ+সাদা, সাদা আলাদা জিন থেকে আসে)।

তাই ক্যালিকো/টরটয়শেল বিড়াল প্রায় ৯৯.৯% মেয়ে। ছেলে হলে তার XXY (Klinefelter syndrome) থাকে – খুব রেয়ার এবং সাধারণত বন্ধ্যা।

২০২৫ সালের ব্রেকথ্রু: অরেঞ্জ জিনের আসল পরিচয়!

৬০ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা জানতেন O জিন X-লিঙ্কড, কিন্তু ঠিক কোন জিন তা জানা ছিল না। ২০২৫ সালে দুটো গবেষণা (Current Biology জার্নাল) অবশেষে সমাধান করেছে:

ARHGAP36 জিনে একটা ডিলিশন (কয়েকটা বেস পেয়ার মুছে যাওয়া) অরেঞ্জ রঙ তৈরি করে। এই ডিলিশনের কারণে জিনের এক্সপ্রেশন বেড়ে যায়, যা মেলানোসাইট কোষে ফিওমেলানিন (অরেঞ্জ পিগমেন্ট) তৈরি করে।

এটা শুধু বিড়ালেই আছে – অন্য প্রাণীতে এমন হোমোলগ নেই। এই আবিষ্কার ক্যালিকো বিড়ালকে X-ইনঅ্যাকটিভেশনের ক্লাসিক উদাহরণ হিসেবে আরও মজবুত করেছে।

কেন মেল ক্যালিকো এত রেয়ার?

  • XXY জেনেটিক অ্যাবনরমালিটি (১০০০-এ ১টা)।
  • চিমেরিজম বা সোম্যাটিক মিউটেশন।
  • এরা সাধারণত বন্ধ্যা হয়।

বিড়ালের অরেঞ্জ, ক্যালিকো বা টরটয়শেল রঙ শুধু সুন্দর নয় – এটা জেনেটিক্সের একটা লাইভ টেক্সটবুক! X ক্রোমোজোমের কারণে ছেলেরা সিঙ্গেল কালার (অরেঞ্জ হলে পুরোটা), আর মেয়েরা দুটো কালার মিক্স করে মোজাইক তৈরি করে। ২০২৫-এর নতুন আবিষ্কার ARHGAP36 আমাদের এই রহস্য আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে।

আপনার বিড়াল কোন রঙের? কমেন্টে শেয়ার করুন! আর পোস্টটা লাইক-শেয়ার করলে অন্য বিড়ালপ্রেমীরাও জানতে পারবে।

Post a Comment

0 Comments